আমার মনে হয় আমাদের সঙ্গে অন্য প্রাণীর পার্থক্যের বড় জায়গাটা আসলে আমরা লিখতে পারি এবং তা যুগ যুগ ধরে সংরক্ষণ করতে পারি। প্রায় হাজার বছরের ইতিহাস-অভিজ্ঞতা আমরা হাজার বছরের পরের প্রজন্মকে দিযে যেতে পারি। আগে কেবল লিখতে পারতাম, এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চলচ্চিত্র, ভিডিও, অডিও কিংবা ইন্টারনেট বা তথ্যপ্রযুক্তি। এটিই আসলে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যায় বলে আমাদের
আমরা পারিপার্শ্বিকতা থেকে শিখি, নিজেদের পরিবার থেকে শিখি আর শিখি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পাঠ্যসূচীর মত পাঠ্যসূচির বাইরের শিক্ষাও আমাদের মনোজগতকে গড়ে তোলে। যারা পড়ার, সিনেমা দেখার, গান শোনার কিংবা বক্তৃতা শোনার সময় বের করতে পারে তারাই শেষ পর্যন্ত নিজেদের আলোকিত আর ঋদ্ধ করে তুলতে পারে।
সবার সঙ্গে আমার পছন্দের একটি তালিকা তাই আমি শেয়ার করতে চাই। এই তালিকাটি আমার নিজের। এই পড়া,সিনেমা দেখা কিংবা গান শোনার মাধ্যমে আমার জগৎটি অনেক বড় হয়েছে, সমৃদ্ধ হয়েছে। তবে মনে রেখো এটি কোন চূড়ান্ত তালিকা নয়। তুমি তোমার মত করে এমন একটি তালিকা বানিয়ে নিতে পারো।
(এই কাজটি এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য শুরু করেছি। এটিকে আর একটু বিকশিত করেছি। আরো কিছু যোগ বিয়োগ করে এটি আমাদের সকল সংগঠনের সদস্যের জন্য পাঠ্যসূচী হিসাবে ঘোষণা করার একটি ষড়যন্ত্র চলমান আছে)
যা পড়তে পারেন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গোরা, শেষের কবিতা, রাশিয়ার চিঠি, পত্রপুট,গল্পগুচ্ছ; কাজী নজরুল ইসলামের রিক্তের বেদন, বিদ্রোহী, সঞ্চিতা; জীবনানন্দের বনলতা সেন; সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে-বিদেশে,চাচা কাহিনী, শবনম; আল মাহমুদের সোনালি কাবিন; হেলাল হাফিজের যে জলে আগুন জ্বলে; মাকর্স আর এঙ্গেলসের কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো; ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের হোয়াট ইজ টু বি ডান; জর্জ ওয়েলের এনিম্যাল ফার্ম; তলস্টয়ের আন্না কারেনিনা; হেমিংওয়ের ফেয়ারওয়েল টু আর্মস; এরিক মারিয়া রেমার্কের অল কোয়ায়েট ওন দ্যা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট; মারিয়ো পুজোর দি গড ফাদার; সুভাষ মুখোপাধ্যায় অনুদিত নাজিম হিকমতের কবিতা; হুমায়ুন আহমেদের ওরা তিনজন, তোমাদের জন্য ভালবাসা, মধ্যাহ্ন, নন্দিত নরকে, জোৎস্না ও জননীর গল্প, প্রিয়তমেষু; মুহম্মদ জাফর ইকবালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, হাত কাটা রবিন, তপু, বিজ্ঞানী সফদর আলির মহা মহা আবিস্কার, রাশা; দেবী প্রসাদের বিজ্ঞান কী ও কেন, যে গল্পের শেষ নেই; ম্যাক্সিম গোর্কির মা; নিকোলাই-এর ইসপাত; আলোক্সান্দার বেলায়েভের উভচর মানুষ, হৈটি টৈটি; রসুল গামজাতভের আমার জন্মভূমি; কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা সিরিজের – আই লাভ ইউ, ম্যান, পালাবে কোথায়, ধ্বংস পাহাড়, কুয়াশা সিরিজের প্রথম ১০টা; তিনগোয়েন্দার বাছাই; সুনীল গঙ্গপাধ্যায়ের সেই সময়, পূর্ব-পশ্চিম; শহিদুল্লাহ কায়সারের সংশপ্তক; জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে;, মানিক বন্দোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা; শরদিন্দুর ব্যাোমকেশের সব বই; আইনস্টাইন আর ইনফেল্ডের পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাস; স্টিফেন হকিং-এর এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম; রিচার্ড ফাইনম্যানের সিওরলি ইউ আর জোকিং; চেতন ভগতের থ্রি মিসটেকস; আর কে নারায়ণের মালগুড়ি ডেইজ; বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী, চাঁদোর পাহাড়; নেহেরুর গিল্পসেস অব ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি; আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের রস্ট্রাম থেকে, ব্রাক্ষ্মণের বাড়ির কাকাতুয়া; জাস্টিন গার্ডের সোফি’জ ওয়ার্ল্ড; প্লেটোর সংলাপ; কাহালিল জিব্রানের দ্যা প্রফেট।
যে সিনেমা দেখতে পারেন
ব্যাটলশিপ পটেমকিন, ক্রেইনস আর ফ্লাইং, ব্যালাড অব এ সোলজার; এডমিরাল ইয়ামামাটো, ব্যাটল অব বালজ, সাউন্ড অব মিউজিক, ইটি- দি একস্ট্রা টেরেস্টিয়াল, চালি চ্যাপলিনের সব নির্বাক চলচ্চিত্র, দি ডিকটেটর, হোয়্যার ঈগল ডেয়ারস, গানস অব নাভারন, ওমর মুখতার, রিচার্ড এটেনবরোর গান্ধী, টার্মিনেটর-১,২,৩, ম্যাট্রিক্স, এ বিউটিফুল মাইন্ড।
সত্যজিৎ রায়ের অপু ট্রিলজি, জয় বাবা ফেলুনাথ; সুবর্নরেখা, পদ্মা নদীর মাঝি, দামু, উত্তম –সুচিত্রার কয়েকটি, থ্রি ইডিয়ট, দামু, তারে জামিন পার, স্বদেশ, নায়ক, কোই মিল গ্যায়া ।
জীবন থেকে নেয়া, আগুনের পরশমনি, সুপ্রভাত, মুক্তির গান, রানওয়ে, ওরা এগারোজন, বেদের মেয়ে জোৎস্না, আম্মাজান, রূপবাণ, মালকা বানু ।
ইরানের চলচ্চিত্রকার মাজিদ মাজিদির চিল্ড্রেন অব হেভেন, কালার অব প্যারাডাইস, সং অব স্প্যারো।
যা শুনতে পারেন
রবীন্দ্রণাথ, নজরুল, অতুল প্রসাদ আর ডিএল রায়ের যতো গান শুনতে পারো। শুনতে থাকো এরিক ক্ল্যাপটন, বব মার্লি, বব ডিলানের যতো গান পাও, হেমাঙ্গ বিশ্বাসের যতো গান খুজে পাও, সোলসের প্রথম দিকের এলবামগুলো, রেনেসা আর আযম খানের গান। শুনতো পারো ফেরদৌস ওয়াহিদ আর হাবীবের গান। কবীর সুমন আর নচিকেতার গানও শুনতে পারো। দরজা খুলে কারো দেখা পাও কী না সে চেষ্টাতেও দোষ নেই যেমন নেই তুমি যেমন আছো তেমন যদি থাকতে চাও।
শুনতে পারে বেটোফেনের সিম্ফনি, রবি শংকর আর বিসমিল্লাহ খানের সেতার, ওস্তাদ জাকির হোসেনের তবলা, চৌরাশিয়ার বাশি।
যে সব বক্তৃতা পড়তে/শুনতে পারেন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষন, মার্টির লুথার কিং-এর আই হ্যাভ এ ড্রিম, জন এফ কেনেডির ভেবো না দেশ তোমাকে কী দিয়েছে ভাবো তুমি দেশকে কী দিতে পারো, দ্যা গলের ফ্রান্স হ্যাজ লস্ট এ ব্যাটল বাট হ্যাজ নট লস্ট দ্যা ওয়ার, স্টিভ জবসের স্টে হাংরি স্টে ফুলিশ, আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গের বক্তৃতা, হাউজ অব কমন্সে চার্চিলের আই হ্যাভ নাথিং টু ওফার বাট ব্লাড, টয়েল, টিয়ার্স এন্ড সোয়েট, ১৯৬৪ সালে কোর্টে নেলসন মান্দেলার আমি শাদাদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে, আমি কালোদের আধিপত্যের বিরুদ্ধ।
তালিকাটি তুমি তোমার মতো করে সাজিয়ে নিতে পারো।
এই তালিকাটি আমাকে সাহস আর শক্তি যোগায়, স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করে।
সবার জীবনের সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।