আইনস্টাইনের সাদা চুলের যে ছবিটা আমরা দেখি সেখানেতার বুদ্ধিদীপ্ত চোখের উপস্থিতি সহজে টের পাওয়া যায় এবং সেখান থেকে সহজে বিশ্বাস করা যায় যে, ছোট বয়সে আইনস্টাইন আসলেই “আইনস্টাইন” ছিলেন। মানে ক্লাসের তুখোড় ছেলে, বিজ্ঞান আর গণিতে ফাটাফাটি অবস্থা, ক্লাসে সবার আগে যেকোন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে, স্কুলে না গেলে চিন্তিত স্যাররা তার খোঁজ নে্য়ার জন্য বাড়িতে চলে আসছেন......ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ঘটনা কি আসলেই তাই ছিল?
গণিতের রাজ্যে একটি গুরুত্ব পূর্ণ সংখ্যা হল পাই (৩.১৪...)। মার্কিন রীতিতে মার্চের ১৪ তারিখকে লিখলে সেটি পাই এর মান প্রকাশ করেবলে ১৪ মার্চকে আমরা এখন পাই দিবস বলি। সেই ১৪ মার্চ, ১৮৭৯ সালে জার্মানির উলমশহরে হারম্যান আর পাউলিনের ঘরে এলবার্টের জন্ম। সে সময় এলবার্টের বাবা হারম্যাণ একটি চাকরি করতেন কিন্তু অচিরে চাকরি খুয়ে তাদের চলে যেতে হয় মিউনিক শহরে, যেখানে আইনস্টাইনের একমাত্র ছোট বোন মারিয়ার জন্ম। মিউনিকেই কেটেছে আমাদের আইনস্টাইনের ছোটবেলা।
জন্মের সময়ই আইনস্টাইন বেশ নাদুস নুদুস। পাউলিন একারণে তাকে নিয়ে একটু সংশয়ে ছিলেন। দেখা গেল আইনস্টাইন কথা বলতে পারে না সহজে। শব্দের পর শব্দ সাজানোতে তার প্রানান্তকর অবস্থা হয়। এর মূল কারণ ছিল বলার জন্য শব্দ খুব সহজে খুঁজে পেত না এলবার্ট। যদিও সে মোটেই তোতলা ছিল না!
স্কুল শুরু করার আগে, চার বা পাচ বছর বয়সেএলবার্টের বাবা তাকে একটি কম্পাস উপহার দেয়। এটি ছিল আইনস্টাইনের জন্য খুবই কৌতুহলউদ্দীপক ব্যাপার। কারণ, যেখানে, যেভাবে রাখা হোক না কেন, ক্যাম্পাসের কাঁটা সব সময় উত্তর দিকে মুখ করে থাকে!!!
৬ বছর বয়সে মিউনিকে একটি স্কুলে যেতে শুরু করে এলবার্ট এবং তার মার ধারণাকে সত্যি প্রমাণ করে ক্লাসে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে থাকে। একে ঠিকমতো কথা বলতে না পারা আর দ্বিতীয়ত কোন বিষয়েই ঠিকমত তৈরি হতে না পারা দুটোই স্কুলে ট্রেডমার্ক হয়ে যায়। স্কুলের শিক্ষকরা এলবার্টকে মোটেই পছন্দ করতো না। এমন কি কোন কোন স্যার তাকে ক্লাশ থেকে বের করে দিত, কারণ বলার মত কোন সাফল্য তার ছিল না। আইনস্টাইন খালি ভাবতেন স্কুল না থাকলে কী হয়! ঠিক মত কথা বলতে পারতো না বলে চুপচাপ এলবার্টের স্কুলে কোন বন্ধু ছিল না। বাসায় ফিরে তাসের ঘর সাজানো আর মারিয়ার সঙ্গে খেলে আর গল্প করে আইনস্টাইন বড় হতে থাকে।
ম্যাক্সই এলবার্টকে উচ্চতর গণিতের বিভিন্ন বই পত্র পড়তে দেয়। এর মধ্যে ক্যালকুলাসের প্রতি এলবার্টের আকর্ষন তৈরি হয় এবং ১২ বছর বয়স থেকে ক্যালকুলাস শেখার চেষ্টা করে। বলাবাহুল্য এসবের সঙ্গে স্কুলের পড়ালেখার কোন মিলই ছিল না।
এর মধ্যে কাকা আর বাবা মিলে কোম্পানি লাটে তুলে১৮৯৪ সালে এলবার্টদের ফ্যামিলি ইতালির মিলানে চলে যায়। পড়ালেখা শেষ করার জন্যএলবার্টকে রেখে যাওয়া হয় মিউনিকে। কিন্তু একে স্কুলের পড়ালেখায় অনীহা তারপর সামরিককায়দা-কানুন এসবের কারণে এলবার্ট স্কুল ছাড়ার চেষ্টা করতে থাকে এবং ৬ মাসের মাথায়একজন ডাক্তারকে রাজি করিয়ে “অসুস্থতার” সার্টিফিকেট জোগাড় করে। আর তা দিয়ে স্কুলথেকে ছুটি। স্কুলের পড়া শেষ না করেই বাবা-মার কাছে এলবার্টের চলে যাওয়া।
স্কুল ছাটাই হওয়া এলবার্টকে নিয়ে তার বাবা-মার উদ্বিগ্নতা বিশেষ মাত্রা পায় কারণ তখন হাইস্কুল পাস না হলে কোথাও ভর্তি হওয়া যেতনা। পরে তার বাবা-মা খুঁজে বের করেন সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের ফেডারেলপলিটেকনিক স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করলেই ভর্তি হওয়া যায়। কাজে আইনস্টাইন সেখানেভর্তি পরীক্ষা দেয় এবং সাফল্যর সঙ্গে প্রায় সকল বিষয়ে ফেল করে। কিন্তু ম্যাক্সেরবিজ্ঞান আর গণিতের বই এবং মেন্টরশীপের কারণে গণিত আর পদার্থবিজ্ঞানে যথেষ্ট ভাল নম্বরপায়। পলিটেকনিকের নিয়ম ভঙ্গ করে কর্তৃপক্ষ তাকে শর্ত সাপেক্ষে সুযোগ দিতে রাজি হয়।শর্ত হলো এলবার্টকে প্রথমে হাই স্কুল শেষ করতে হবে। পাশের আরাউ শহরে জস্টউইন টেলারের বিশেষ স্কুল থেকে আইনস্টাইন ১৭ বছর বয়সে গ্র্যাজুয়েট হয়ে জুরিখ পলিটেকনিকে ফেরৎ আসে।
সেখানকার বন্ধুবান্ধব কিংবা প্রফেসসরদের সঙ্গে এলবার্ট আইনস্টাইনের সখ্যতা, বিরোধের গল্পও বেশ চিত্তাকর্ষক। তবে সে অন্য প্রসঙ্গ।
আপাতত কোন বন্ধুকে ইয়াং আইনস্টাইন ডাকার আগে মনে রেখ – আইনস্টাইন মোটেই ক্লাশের ফার্স্ট বয় ছিলেন না!